সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত এই আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার পুলিশের গাড়িতে করে কঠোর নিরাপত্তায় দুই দফায় তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। বিকাল সোয়া ৪টায় প্রথমে মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত আলীসহ ৬ জনকে আদালতে তোলা হয়। পরে কঠোর পুলিশি পাহারায় চট্টগ্রাম থেকে এনে বিকাল ৫টায় তোলা হয় নানা অপকর্মের হুতা ওসি প্রদীপকে।
পরে আদালত দুই দফা শুনানি শেষে হত্যা মামলার ৭ আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জেলহাজতে প্রেরণকৃত আসামিরা হলেন- মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া। মামলায় আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাখাল চন্দ্র মিত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন ওই মামলায় এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফার নাম দিলেও সে নামে ওই তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের কোনো সদস্য নেই বলে দাবি করে সূত্রটি।
এদিকে ওসি প্রদীপকে আদালতে হাজির করার সময় উপস্থিত উৎসুক জনতা নানা আপত্তিকর গালিগালাজ করেন। অনেকেই ‘খুনি প্রদীপের ফাঁসি চাই’ বলেও শ্লোগান দেন। পরে পুলিশ উপস্থিত লোকজনদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
মেজর সিনহা হত্যার আসামিদের আদালতে আনার খবরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন কক্সবাজার আদালত চত্বরে।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সিনহা হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলে গাড়ি নিয়ে এলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পুলিশ। বিকাল ৫টার দিকে তাকে তোলা হয় কক্সবাজারের টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আত্মসমর্পণকৃত সব আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গেল বুধবার রাত ১০টায় টেকনাফ থানায় আদালতের নির্দেশে মেজর সিনহার বোনের করা হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত হয়। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফের বিচারক তামান্না ফারহার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। পরে আদালত সেটি টেকনাফ থানাকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মামলার তদন্তভার দেয়া হয় কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অধিনায়ককে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। তার ওপর গুলি চালান বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত। নিহত সিনহা রাশেদকে ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ২০ জনকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে পুরো নতুন টিম দেয়া হয়েছে।
আলোচিত-সমালোচিত-পুরস্কারপ্রাপ্ত
যার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়, সেই পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৯৬ সালে।
২০০৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার থাকাকালে পাথরঘাটায় এক বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগে তিনি বরখাস্ত হন।
এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত হয়ে তিনি কাজ শুরু করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশে। পরে পদোন্নতি পেয়ে ২০১০-১১ সালে পতেঙ্গা থানার ওসির দায়িত্ব পান।
২০১৩-১৪ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জামায়াত-শিবিরের নাশকতা প্রতিরোধে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখে আলোচনায় আসেন প্রদীপ।
কিন্তু কিছুদিন পর নিজের আত্মীয়র জায়গা দখলের ঘটনায় আবারও তিনি বিতর্কে জড়ান। এরপর পাঁচলাইশ থেকে সরিয়ে তাকে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি করা হয়।
২০১৫ সালে সুপার রিফাইনারি নামে একটি তেল শোধনাগারের নয় হাজার লিটার তেল আটক করে ফের আলোচনার জন্ম দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পরে সিলেট রেঞ্জে বদলি হন প্রদীপ। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে বদলি হয়ে তিনি সিএমপির ডিবিতে যোগ দেন।
ওই বছরই পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় আবু নসুর গুন্নু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পরিদর্শক প্রদীপের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রদীপ দাশকে বদলি করা হয় কক্সবাজারে। ২০১৭ সালে উখিয়া থানার ওসির দায়িত্ব পান তিনি। পরে সেখান থেকে বদলি করা হয় মহেশখালী থানায়।
সেখানে জলদস্যু দমনে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হন প্রদীপ। মহেশখালী থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে টেকনাফ থানার ওসি করে পাঠানো হয়।
টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত প্রদীপ কুমার দাশকে ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদকে ভূষিত করা হয়।
এসএস